Dhaka Saturday, May 11, 2024

সড়কে চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া আশরাফ


Published:
2020-11-02 08:46:53 BdST

Update:
2024-05-11 22:22:31 BdST

করোনায় ৫৯ দিন বন্ধ থাকার পর গত মাসের শুরুতে সারাদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস-মিনিবাস- ট্রাক চালুর সময় চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি ওঠে৷ বলা হয়, চাঁদাবজি বন্ধ হলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না৷ কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি৷ গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন থেকেই চাঁদাবাজিতে তৎপর আশরাফ গং৷ চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশের আইজির কঠোর হুশিয়ারির পরও আশরাফুল আলম আশরাফ থামছেনা৷ কিছু কৌশল পরিবর্তন করেছে মাত্র৷

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুর ঘটনায় সুপ্রভাতের রুটপারমিট বাতিল করে দেয় এবং সুপ্রভাত পরিবহন রুটের সভাপতি আলাউদ্দিন ও রুটের এমডি আশরাফ উদ্দিন ,  অন্য রুটের বাস হওয়া সত্ত্বেও দিনে এক হাজার ৩০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে সুপ্রভাতের ওই বাসটিকে পুরান ঢাকা থেকে গাজীপুর রুটে চালানোর অনুমতি দেন তারা।

ফলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়, একই সাথে রুটপারমিট বাতিল করে দেয়।কিন্তু অদৃশ্য প্রভাব খাটিয়ে মামলা থেকে তারা দুজন খালাস পান।

অন্যদিকে, ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের মালিক গোলাম ফারুক মানিকের সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়্ তাদের সুপ্রভাত বাস ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের ব্যানারে চলবে। অন্যদিকে, কিছু বাস চলে আকাশ এন্টারপ্রাইজের নামেও।

শর্ত অনুযায়ী- অবৈধ- বেআইনি কোন প্রকার চাঁদা তোলা যাবেনা। কিন্তু ঢাকা সড়ক পরিবহন নেতা আশরাফুল আলম আশরাফ ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের নামে প্রতি গাড়ি থেকে ৮০০ টাকা চাঁদা তুলেন, এ চাঁদা বন্ধ করে দেন এ ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের মালিক গোলাম ফারুক মানিক।

আশরাফের লোকদের চাঁদা বন্ধ করে দেওয়ার একটি ভিডিও বিজনেস ট্রিবিউনেোর হাতে পৌছেছে। সেখানে দেখা যায়, আশরাফের লোক পুরান ঢাকার শাখারীবাজার মোড়ে কোর্টের সামনে গাড়ি প্রতি ৮০০ টাকা চাঁদা তুলছে।, সেই চাঁদা বন্ধ করে দেন ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের মালিক গোলাম ফারুক মানিক।তাকে বলতে দেখা যায়, এটা কিসের টাকা,রাস্তায় কোন জিপি বা সাধারণ পেমেন্ট নামে কোন চাঁদা তোলা যাবেনা।

এর জের ধরে গত সপ্তাহে সদরঘাট ও কামাড়পাড়া রুটে আশরাফের উদ্দিনের কিছু গোন্ডাবাহিনী দিয়ে মেরুল বাড্ডা তার অফিসের সামনে উল্টো বাস আটকিয়ে আসল মালিক গোলাম ফারুক মানিক ও ফয়সাল এবং যুবলীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেনকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে কতিপয় পেইড এজেন্ড মিডিয়া দিয়ে মিথ্যা অপ্রচার চালায়।

এসম্পর্কে ভিক্টর ক্লাসিক পরিবনের একাধিক মালিের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন,গোলাম ফারুক মানিক, ফয়সাল ভাই তাদের অবস্থান চাঁদার বিরুদ্ধে।তারা চাঁদার বিরুদ্ধে কথা বলেন। যেখানে আশরাফ গলাকেটে প্রতি গাড়ি থেকে ৮০০ টাকা উঠাতো, সেখানে তারা আমাদের একদম ফ্রী গাড়ি চলাচল ব্যবস্থা করে দিয়েছে।রাস্তায় অবৈধ চাঁদা বা জিপি নামে যে চাঁদা দিতো হতো তা বন্ধ করে দিয়েছেন।

এছাড়াও আশরাফুল আলম আশরাফের বিরুদ্ধে সই জালিয়াতি করে ভিক্টর ক্লাসিক বাস মালিক সমিতি নকল করে ভিক্টর বাস মালিক সমিতি পরিবহন লিমিটেড নামে গোলাম ফারুক মানিকের মালিকানা দখলের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে কোর্টে মামলা চলছে বলে জানা যায়।

ঢাকা শহরের ভিতরে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী হিউম্যান হলার থেকেও নতুন কৌশলে চাঁদা নেয়া হচেছ ৮০০- ১৪০০ টাকা৷ এই চাঁদা অবশ্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন নামে নেয়া হচ্ছে৷ তারাও স্ট্যান্ড থেকে না নিয়ে নির্ধারিত নতুন জায়গা থেকে নিচ্ছে৷ আর এই চাঁদা না দিয়ে উপায় নেই৷ কারণ ‘দিন সব সময় একই রকম থাকবে না' বলে আশঙ্কা৷

পরিবহন নেতারা চাঁদাবাজদের নাম জানেন
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন বলেন, ‘‘পুলিশ তো সব কিছু ধরতে পারে না৷ চাঁদাবাজির কৌশলে যে পরিবর্তন এসেছে তারা সেটা হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি৷ আর ২৪ ঘণ্টাতো পুলিশের পক্ষে পাহারা দেয়া সম্ভব নয়৷ চাঁদাবাজির ব্যানার পরিবর্তন হয়েছে৷ জায়গা বদল হয়েছে৷ মালিক সমিতির লোকজন তো এইসব চাঁদাবাজদের চেনেন৷ তারা তালিকা দিলেই কিন্তু চাঁদাবাজদের ধরা যায়৷’’

যে কৌশলে এখন চাঁদা আদায় হয়:
পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শ্রমিক এবং মালিক সংগঠনের নামে এখন সরাসরি বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদা আদায় বন্ধ আছে৷ তবে এখন চাঁদা আদায় হচ্ছে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির নামে, বাস টার্মিনালের বাইরে৷ যেমন ‘যাত্রী সেবা’ একটি পরিবহন কোম্পানি৷ তাদের অধীনে বিভিন্ন মালিকের পাঁচশ' বাস চলে ঢাকা থেকে দেশের বিভন্ন রুটে৷ এরমধ্যে ঢাকা-চাটখিল রুটে লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, বিপুরা চর, নাসের পেটুয়া স্পটে প্রতিবাস থেকে ৪২০ টাকা করে চাঁদা তোলা হয় প্রতিদিন৷ এই চারটি স্পটের যেকোনো সুবিধাজনক স্পট থেকে চাঁদা নেয়া হয়৷

এরকম আরেকটি পরিবহন কোম্পনি হলো ‘তিষা’৷ তাদের অধীনে বাসগুলো ঢাকা-কুমিল্লা- লাকসাম রুটে চলাচল করে৷ কোম্পানির নামে লাকসামে প্রতি গাড়ি থেকে ৫২০ টাকা চাঁদা তোলা হয়৷ তবে তারা পরিস্থিতি বুঝে চাঁদা তোলার জায়গা পরিবর্তন করে৷ দেশের অন্যান্য রুটেও একই কৌশলে চাঁদা আদায় হচ্ছে৷

ঢাকা শহরের মধ্যে বাসগুলোও বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির ব্যানারে চলাচল করে৷ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সালসাবিল, বৈশাখী, তুরাগ, অনাবিল প্রভৃতি৷ এই কোম্পানিগুলো এখন প্রতিটি বাস থেকে দিনে ৮২০ টাকা করে এখন চাঁদা নেয়৷ জানা গেছে, চাঁদাবাজির এই নতুন কৌশলকে বলা হচ্ছে ‘সম্মিলিত চাঁদা’৷ এখান থেকে মালিক ও শ্রমিক নেতারা ভাগ নিচ্ছেন৷

চাঁদাবাজদের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত হচ্ছে?
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ১ জুন থেকে এ পর্যন্ত পুলিশ সারাদেশের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ১০৯ জন পরিবহন চাঁদাবাজকে আটক করেছে৷ মামলা করেছে ৫১ টি৷ পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য মতে, সারাদেশে চাঁদাবাজদের নেটয়ার্ক চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হচ্ছে৷ আর এই অভিযান অব্যাহত থাকবে৷

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ পুলিশ সড়ক মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছে৷ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছেন তাদের কাছ থেকে ধারাবাহিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে৷’’

২০১৯ সালে পুলিশের এক প্রতিবেদনে বলা হয় শুধুমাত্র মহাসড়কে ২০১৮ সালে ৮৭ কোটি টাকার চাঁদা আদায় করা হয়৷ ২১৫টি সংস্থা ও সংগঠন মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে দিনে গড়ে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা তোলে৷ তবে এই হিসাব আসলে আদায় রসিদ দিয়ে যে চাঁদা আদায় করা হয় তার৷ ‘বোবা চাঁদার’ হিসেব এরমধ্যে নাই৷ আর এই হিসাবের মধ্যে জেলা থেকে উপজেলা এবং ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন মহানগর ও শহরের মধ্যে চলাচলকারী বাস মিনিবাস ও অন্যান্য যানবাহন থেকে আদায় করা চাঁদার হিসেবও ধরা হয়নি৷



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top