গরু ছাগল পালন শিখতে বিদেশে যাবেন ১ হাজার ১২৫ কর্মকর্তা, ব্যয় ৬২ কোটি
Published:
2020-08-25 23:42:22 BdST
Update:
2024-12-13 15:07:50 BdST
দেশের গরুর-ছাগলের উন্নয়নে ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার এলডিডি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিচ্ছে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা, বাকিটা দিচ্ছে সরকার।
এলডিডি প্রকল্পের অধীনে বিদেশ যাত্রার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গরু-ছাগল পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য এ প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের ১ হাজার ৫০ জনকে বিদেশে পাঠানো হবে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি ৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। জনপ্রতি ব্যয় হবে ৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও বিদেশে গরু-ছাগলের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ৭৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জনপ্রতি ব্যয় ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা।
বিশেজ্ঞরা বলেন, গরু-ছাগল পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বিষয়ে বিদেশ যাওয়া দরকার নেই, পশু পালন সম্পর্কে যদেষ্ট জ্ঞান আমাদের দেশেই কৃষকদের রয়েছে আছে,তাছাড়া আধুনিক যুগে ইউটিউভসহ বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য,এটা অযথা মানে বিদেশ ভ্রমণই তাদের লক্ষ্য।দেশের অর্থ লুটপাট করা ছাড়া কিছুই না।
গত বছর শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বরে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাবি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশে গরু-ছাগলের প্রবৃদ্ধি হবে ২০ শতাংশ। আর বিশ্বব্যাংক মনে করে, ২০ লাখ ছোট ও মাঝারি খামারি পশু পালনে এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন।
কেনাকাটায় অস্বাভাবিক ধরা হয়েছে,
এদিকে, একই প্রকল্পের জন্য,অতিথির বসার জন্য একটি চেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ছয় লাখ টাকা। দুধে কী পরিমাণ পানি আছে, তা মাপার একটি যন্ত্রের দাম ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। একটি বর্জ্য রাখার পাত্রের দাম আড়াই লাখ টাকা। স্কুলে স্কুলে দুগ্ধজাত পণ্য প্রদর্শনীর পেছনে ব্যয় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ৪ হাজার ২৮০ কোটি টাকার প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন (এলডিডি) প্রকল্পের কেনাকাটায় এই অস্বাভাবিক দাম অনুমোদন করা হয়েছে। এখন শুধু কেনার বাকি। এই প্রকল্পের অধীনে গরু-ছাগল উন্নয়নে বিদেশ সফরের ব্যবস্থাও আছে।
রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম, আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট আলিবাবা ডটকম ও পণ্য বিক্রির দোকানে খোঁজ নিয়ে প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি। বাজারমূল্যের সঙ্গে প্রকল্পের পণ্যমূল্যের ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। যেমন দুধে পানি মাপার যন্ত্রের দাম ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ধরা হলেও বাজারে এই যন্ত্র পাওয়া যায় ৬০ টাকায়। আর তারা দুধে পানি মাপার যন্ত্রে য়ে মিলটেষ্টারের কথা বলছে, সেটার দাম সবোচ্চ ৪২ হাজার রুপি।
রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম, আন্তর্জাতিক ই-কমার্স সাইট আলিবাবা ডটকম ও পণ্য বিক্রির দোকানে খোঁজ নিয়ে প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয়ের সঙ্গে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি। বাজারমূল্যের সঙ্গে প্রকল্পের পণ্যমূল্যের ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। যেমন দুধে পানি মাপার যন্ত্রের দাম ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা ধরা হলেও বাজারে এই যন্ত্র পাওয়া যায় ৬০ টাকায়। আর তারা দুধে পানি মাপার যন্ত্রে য়ে মিলটেষ্টারের কথা বলছে, সেটার দাম সবোচ্চ ৪২ হাজার রুপি
অস্বাভাবিক এই ব্যয়ের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি আসার আগেই এই কেনাকাটার দর প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। কোনো প্রকল্পে অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে আমি পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলাম, সেখানে রূপপুর বালিশ-কাণ্ডের ঘটনায় ৩২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তাঁরা জেলে গেছেন। এফআর টাওয়ারে ৬২ জন অভিযুক্তের নামের তালিকা আমরা প্রকাশ করেছি। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের কেনাকাটার অনুমোদিত দাম প্রস্তাবে অসংগতি থাকলে অভিযুক্তদের শাস্তি পেতে হবে। কোনোভাবেই অস্বাভাবিক কেনাকাটা প্রশ্রয় দেবে না এই মন্ত্রণালয়।’
অস্বাভাবিক খরচের খাত
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এলডিডি প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের অতিথির জন্য একটি চেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ৬ লাখ টাকা। প্রকল্প পরিচালক ও পরামর্শকের চেয়ার-টেবিলের জন্য ব্যয় ২০ লাখ টাকা।
দুটি আসবাবপত্র বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অটবি ও আকতার ফার্নিচারের শোরুমে সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এ দুটি প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ টাকা দামের চেয়ার তৈরি করে না। রাজধানীর পান্থপথে অটবি শোরুমে বিক্রয় ও বিপণন নির্বাহী আশরাফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অটবিতে সর্বোচ্চ দামের চেয়ার ছিল ৫৫ হাজার টাকা, এগুলো এখন আর নেই। এখন সর্বোচ্চ দামের চেয়ার আছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর একটি অফিস টেবিলের সর্বোচ্চ দাম ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। চেয়ারের দাম প্রতিটি ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা।
পান্থপথে আকতার শোরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত খুচরা ও করপোরেট বিক্রয় কর্মকর্তা জোনায়েদ হোসেইন বলেন, এখানে সবচেয়ে দামি চেয়ারের দাম ৪৫ হাজার টাকা। এটি সেগুন কাঠের। একটি টেবিল ও চারটি চেয়ার ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে এখানে পাওয়া যায়। তিনি ৬ লাখ টাকার চেয়ারের কথা কখনো শোনেননি। কেনাকাটার তালিকায় আছে দুধে পানি পরীক্ষার যন্ত্র। এই যন্ত্র মাঠপর্যায়ের কর্মীদের দেওয়া হবে খামারিদের দুধে পানির পরিমাণ পরীক্ষার জন্য। এ ধরনের যন্ত্র (মিল্ক টেস্টার) কেনা হবে প্রতিটি ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। এ খাতে ৩০০ সেট যন্ত্র কিনতে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। রাজধানীর টিকাটুলীর হাটখোলায় সায়েন্টিফিক মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, এ ধরনের যন্ত্র বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৬০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায়।
এই মার্কেটের পদ্মা সায়েন্টিফিক কোম্পানির মালিক এই এম সবুজ বলেন, ৬০ টাকার যন্ত্রটি দিয়ে দুধে পানি আছে কি না, তা পরীক্ষা করা হয়; যন্ত্রটির নাম মিল্ক টেস্টার। আর দুধের ফ্যাটসহ বিভিন্ন মান পরীক্ষায় যেসব যন্ত্র ব্যবহার যায়, তা ৮ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।
গাভি গর্ভবতী কি না, তা পরীক্ষার জন্য ৬৫ ইউনিট কিট কেনা হবে। এ জন্য বরাদ্দ ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতি ইউনিট (এক হাজার পিস) কিটের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে গাভি গর্ভবতী কি না, তা হাত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কিটের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সাইটে ১ হাজার পিস বক্সের কিটের দাম ৯০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। গরুর গর্ভধারণ সুনির্দিষ্টকরণে বহনযোগ্য এমন আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
গাভি গর্ভবতী কি না, তা পরীক্ষার জন্য ৬৫ ইউনিট কিট কেনা হবে। এ জন্য বরাদ্দ ১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতি ইউনিট (এক হাজার পিস) কিটের পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশে গাভি গর্ভবতী কি না, তা হাত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়। কিটের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার সাইটে ১ হাজার পিস বক্সের কিটের দাম ৯০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা। গরুর গর্ভধারণ সুনির্দিষ্টকরণে বহনযোগ্য এমন আলট্রাসাউন্ড যন্ত্রের দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
প্রান্তিক খামারির মধ্য থেকে গর্ভবতী অবস্থায় ৪ হাজার গরুকে ১০০ দিনের খাবার (ক্যাটল ফিড) বিনা মূল্যে দেওয়া হবে এ প্রকল্প থেকে। এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রতিটি গরুর পেছনে খাবারের বরাদ্দ ২৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি খাবার কেনা হবে ৮০ টাকায়। দেশের দুটি বড় ফিড কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর জন্য সব থেকে দামি খাবারের প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা। এই দামে খাবার খামারির দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে আসে কোম্পানিগুলো।
প্রকল্পের মাঠকর্মীদের জন্য ৪ হাজার ২০০ বাইসাইকেল কেনা হবে, যার পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রতিটি সাইকেলের দাম ১৫ হাজার টাকা। পুরান ঢাকার সাইকেল ব্যবসায়ী মুরাদ শেখ বলেন, গ্রামগঞ্জে চলাচলের জন্য ক্যারিয়ারযুক্ত যেসব সাইকেল বিক্রি হয় তার সর্বোচ্চ দাম ৮ হাজার টাকা।
মাঠকর্মীরা সাইকেলে বহন করতে পারবেন এমন কিটবক্স কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতিটি কিটবক্সের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। বাংলাদেশি ই-কমার্স সাইট আজকেরডিলে এ ধরনের কিটবক্সের দাম ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা।
দেশের ১ হাজার ৮৬০টি স্থানে গরু-ছাগলের প্রদর্শনী করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রতিটি প্রদর্শনীর পেছনে ব্যয় হবে ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। দেশের ২ হাজার স্কুলে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রদর্শনীতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। প্রতিটি প্রদর্শনীর জন্য ব্যয় হবে ১০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
কোনো পশু বা মানুষের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে যা একটি ঘূর্ণমান যন্ত্রের মধ্যে রাখা হয় যেটি ‘সেন্টার ফিউজ’ নামে পরিচিত। একটি সেন্টার ফিউজের দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭ হাজার ২৮০ টাকা। ১৯টি সেন্টার ফিউজ কেনা হবে প্রকল্পের অর্থে। এ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।
কোনো তরলের অম্লতা পরিমাপের যন্ত্রের নাম পিএইচ মিটার। একটি পিএইচ মিটারের দাম ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। অথচ মাত্র ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকায় বাজারে পিএইচ মিটার পাওয়া গেছে।
একটি অটোক্লেভ মেশিনের দাম ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বাজারে এ ধরনের এ যন্ত্র ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। একটি ডিজিটাল মাইক্রোসকপির (অণুবীক্ষণ যন্ত্র) দাম ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। যন্ত্রটি ঢাকায় আড়াই হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
এ ধরনের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে বাংলাদেশে মিডিস্টোর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মী কামরুল হাসান বলেন, সব থেকে কম দামি সেন্টার ফিউজের দাম সাড়ে ৩ হাজার টাকা, এটি চীনা কোম্পানির। তাইওয়ানের সেন্টার ফিউজের দাম ১৬ হাজার টাকা। আর জার্মানির সেন্টার ফিউজের দাম ২২ হাজার টাকা।
উপজেলা শহরে যেসব মাংস বিক্রির অবকাঠামো রয়েছে, তা সংস্কারে ব্যয় করা হবে ৪১১ কোটি টাকা। ১৯২টি উপজেলা শহরের মাংসের দোকান সংস্কারে এ ব্যয় করা হবে। প্রতিটির পেছনে ব্যয় হবে ২ কোটি ১৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। অথচ এ অর্থ দিয়ে নতুন করেই এমন অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।
গবেষণাগারের বর্জ্য রাখার জন্য প্রতিটি পাত্রের ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। ই-কমার্স সাইট আলিবাবাতে এটি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। প্রকল্পের প্রচার-প্রচারণার জন্য ব্যয় রাখা হয়েছে ২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
প্রকল্পের কেনাকাটার দাম ঠিক করেছেন প্রকল্প পরিচালক ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াসিউদ্দিন আহমেদ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম আতাউর রহমান। গত বছরের ১৭ জুলাই তাঁরা এই দাম নির্ধারণ করেন। এই কেনাকাটার কাজ ইতিমধ্যে শুরুও হয়েছে।
এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম আতাউর রহমান অবসরে চলে গেছেন।
প্রকল্প পরিচালক ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ওয়াসিউদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালক করা হয়েছে সরকারের যুগ্ম সচিব মো. আবদুর রহিমকে।
এছাড়া বর্তমান এ প্রকল্পের দায়িত্বে আছেন ড. মো. গোলাম রাব্বানী তিনি প্রাণিসম্পদ ও ডেইরী উন্নয়ন (এলডিডি) এই প্রকল্পের বর্তমান চীফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর, ডা. এস এম নুরুল আমীন, তিনি উপ-প্রকল্প পরিচালক , ডা. মো. জহিরুল ইসলাম তিনি উপ-প্রকল্প পরিচালক , ইঞ্জিনিয়ার পার্থ প্রদীপ সরকার তিনিও উপ-প্রকল্প পরিচালক , ড. এবিএম মুস্তানুর রহমান ,উপ-প্রকল্প পরিচালক ,ড. মো. শাকিফ-উল-আযম, উপ-প্রকল্প পরিচালক ।
কেনাকাটায় অস্বাভাবিক দামের বিষয়ে জানতে ওয়াসিউদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে কল ও খুদেবার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি জবাব দেননি। তাঁর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করেও সফল হননি এই প্রতিবেদক।
কেনাকাটায় পণ্যের দামের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের প্রকল্প মূলত কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সম্পদই বৃদ্ধি করে, মানুষের লাভ হয় না। উল্টো বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আনা ঋণ জনগণকে পরিশোধ করতে হয়। বালিশ, পর্দা, বঁটি কেলেঙ্কারির ধারাবাহিকতায় এটি আরও বড় কেলেঙ্কারি। এটি সাগরচুরির চেয়ে অনেক বড় ঘটনা।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এভাবে কেনাকাটা হলে দুর্নীতিতে এটি বিশ্ব রেকর্ড করবে। প্রকল্পটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অথচ অস্বাভাবিক দাম কারও চোখে পড়েনি। এর অর্থ হলো একটি সামগ্রিক দুর্নীতির চক্র এখানে কাজ করছে। এর দায় সরকারের পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকেরও রয়েছে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির বিষয়ে যা বলে তা অনুশীলন করে না, এই প্রকল্পের কেনাকাটা অনুমোদনের মধ্য দিয়ে আবার সেটা প্রমাণিত হলো। বিশ্বব্যাংক ও সরকারের উচিত হবে এই কেনাকাটার অনুমোদন বাতিল করা এবং এর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের সবাইকে শাস্তির মুখোমুখি করা।
Topic:
Leave your comment here: