Dhaka Sunday, May 19, 2024

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে

জমি অধিগ্রহণেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন প্রকল্প পরিচালকের!


Published:
2020-12-22 17:53:44 BdST

Update:
2024-05-19 17:28:27 BdST

লাল দাগের ভিতরে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ. চৌধুরী!

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে বরাদ্দ ছিল ছয় হাজার ২২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তবে এ খাতে ব্যয় হবে সর্বোচ্চ তিন হাজার ৮১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এর পরও প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণে আরও ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। ফলে জমি অধিগ্রহণে তিন হাজার ৩৪৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের আয়োজন করেছে রেলওয়ে।

পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে তিন হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা লুটপাটের মহাআয়োজন

 

 

সম্প্রতি পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রেলওয়ের নিজস্ব এ হিসাব গোপন করে ভুল তথ্য দিয়ে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সূত্রমতে, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০১৬ সালের মে মাসে। সে সময় ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। তবে প্রথম দুই দফা জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ সঠিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়নি। এ অজুহাতে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাড়ানোর প্রস্তাব করে রেলওয়ে। আর তা নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পদ্মা রেল সেতু সংযোগ প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৬৬৪ একর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৮৫৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৮৬ একর। আর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২২৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে এ সংশোধন করা হয়।

নতুন হিসাবে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪২৬ একর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ১৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তবে প্রায় এক হাজার ৭০০ একর অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন সংস্থার (সেতু বিভাগ, সওজ) জমি রয়েছে বড় অংশ। ফলে জমি অধিগ্রহণে খুব বেশি অর্থ ব্যয় হবে না। সব মিলিয়ে প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণে চূড়ান্ত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ফলে প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় হবে না।

জমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত বরাদ্দের কারণ জানতে গতকাল রেলভবনে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ. চৌধুরীর কার্যালয়ে গেলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ তথ্য আপনি কোথায় পেয়েছেন?’ উত্তরে প্রতিবেদক জানান, ‘এটা রেলওয়ের তথ্য।’ তখন তিনি বলেন, ‘এভাবে আমি কোনো মন্তব্য দেব না। আপনি কোথায় এ হিসাব পেয়েছেন?’

প্রতিবেদক জানান, ‘জমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে মাত্র তিন হাজার ৮১৮ কোটি টাকা আর বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাত হাজার ১৬৫ কোটি। এটা রেলওয়ের নিজস্ব হিসাব।’ তখন প্রকল্প পরিচালক উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনি আমার রুম থেকে বেরিয়ে যান।’ প্রতিবেদক তখন বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি কোনো মন্তব্য দেবেন নাÑতাই লিখে দেব?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনার যা মনে চায় লিখেন।’

প্রসঙ্গত, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে দ্বিতীয় দফা জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি অনুমোদনের এখতিয়ার ছিল না পরিকল্পনা কমিশনের। সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি-সংক্রান্ত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ: ১৬ (১৪)তে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া আছে।

পরিপত্র অনুযায়ী, ‘২০ একরের বেশি জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব অনুমোদনের এখতিয়ার পরিকল্পনা কমিশনের নেই। এক্ষেত্রে একনেকের (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন নিতে হয়।’ পদ্মা সেতু প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধির প্রস্তাবে ২০১৭ সালে এ যুক্তিতে আপত্তি তুলেছিল পরিকল্পনা কমিশন; পরে এ বিষয়ে একনেকের অনুমোদন নিতে হয়।

যদিও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ৬৪০ একর জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি খাতের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি-সংক্রান্ত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ: ১৬ (১৯)-এর আলোকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধন সময়সাপেক্ষ। এছাড়া এখনই ডিপিপি দ্বিতীয় সংশোধন করা হলে প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে নির্মাণ প্যাকেজের আবারও সংশোধনী প্রয়োজন হলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি ২০১৬-এর ১৬.১১ অনুচ্ছেদ অনুসারে বিশেষ সংশোধনের মাধ্যমে কোনো অঙ্গের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায় না। আর ১৬.১৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে কন্টিনজেন্সি কোনো অঙ্গের মাত্র ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা যায়। তাই ১৬.১৯ অনুচ্ছেদের আলোকে বাড়তি ব্যয় অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top