Dhaka Wednesday, May 8, 2024

ওয়াসার এমডি বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ


Published:
2020-08-23 07:11:49 BdST

Update:
2024-05-08 04:07:19 BdST

বছরে মূল বেতন ৭০ কোটি টাকা, আর ওভারটাইম ৯৫ কোটি! অবিশ্বাস্য হলেও এটিই ঘটেছে ঢাকা ওয়াসায়। শুধু তাই নয়, প্রায় ১২শ’ কোটি টাকা কাগুজে রাজস্ব আয় দেখানো হয়েছে। আর ২৫০ কোটি টাকার কেনাকাটার কোন কাগজপত্র মেলেনি। ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের জামানায় মোট সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার হদিসও পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের অডিট রিপোর্টে এনিয়ে আপত্তিও জানিয়েছিলেন অডিটররা। কিন্তু অজানা কারণে এতোদিনেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা ওয়াসায় স্থায়ী কর্মচারী ছাড়াও মাস্টার রোল ও আউট সোর্সিং এ অনেক জনবল কাজ করে। পাম্প পরিচালনসহ নানা কাজে নিয়োজিত থাকে তারা। এদের মধ্যে শুধু নিজস্ব অর্থাৎ স্থায়ী কর্মচারীরা ওভার টাইমের সুযোগ পান মূল বেতনের ঘণ্টা হিসেবে।

ওয়াসার হিসাব বলছে, বেতনের প্রায় দ্বিগুণ টাকা খচর হয়েছে ওভারটাইমে। ২০১৮ সালে এমডিসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন ছিল ৭০ কোটি টাকা। বিপরীতে আড়াই হাজার কর্মচারীর নামে ওভারটাইম দেয়া হয়েছে ৯৫ কোটি টাকা!

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য আলি আহমদ গরমিলের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ওয়াসা যেভাবে কাজ করাচ্ছে তাতে তো বেতনের দরকার নেই। শুধু ওভারটাইমে কাজ করালেই তো হয়। এখানে বড় ধরণের গরমিল আছে। এটা অর্থের অপচয়।

ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের জামানায় অনিয়মের গল্প তার পদে থাকার মতোই বেশ লম্বা। ওই সময়েই ওয়াসার রাজস্ব আদায়ের হিসাবে বড় ধরণের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে শুধু রাজস্ব আয়ের নামে দেখানো ১ হাজার ১৮৩ কোটি টাকার হদিস নেই। অর্থাৎ শুধু কাগজেই রাজস্ব দেখিয়েছে ওয়াসা।

এসব বিষয় নিয়ে ওইসময়ে করা অডিটে কোনকিছুরই ভাউচার বা প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে জানান সাবেক অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমদ। বলেন, অডিট চলাকালে যেসব বড় বড় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে সন্দেহ মনে হয়, অডিটর ওইসবের হিসাব জিজ্ঞাসা করে। যেকোন হিসাবের ব্যাখ্যা কাগজের মাধ্যমে দিতে হবে; মুখে দিলে হবে না। কিন্তু স্টেশনে যিনি এখন আছেন তিনি এসব হিসাব গরমিলের আশানুরূপ কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। আর যেসব ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে একটার সাথে আরেকটার মিল নেই। তাই আপত্তি দেয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে বিশাল অংকের অনিয়ম পাওয়ায় অডিটে আপত্তি তোলে অডিটর কোম্পানি হুদাভাসি। পানি বিক্রির আয় ৬৪৭ কোটি টাকা দেখানো হলেও তা ব্যাংকে জমা হয়নি- উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়া হয়। অথচ এতো বড় অনিয়মে ব্যবস্থা তো দূরে থাক, বিষয়টি জানেনই না স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলাললুদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। আমাদের কাছে যদি প্রতিবেদন দেয়া হয়, তাহলে আমরা একটি কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

তবে সচিব হেলাললুদ্দিন আহমেদের এমন কথাকে দায়িত্বের অবহেলা হিসেবে দেখছেন সাবেক অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমদ। বলেন, মন্ত্রণালয়ের যিনি সচিব তিনি সবকিছুর জন্য দায়বব্ধ। দায় এড়ানোর কোন সুযোগ তার নেই।

একই সুরে কথা বললেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ওয়াসা কোন ভাবেই এসব অনিয়মের দায় এড়াতে পারে না। এখানে ওয়াসার শীর্ষ কর্মকর্তা ও বোর্ডের দায় রয়েছে। কারণ সবকিছু দেখভাল করে থাকে বোর্ড।

কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই- সেই প্রবাদের মতোই পাইপসহ আড়াইশ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে ওয়াসায়। যার কাগজ পত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২০১০ সাল থেকে নেয়া ৩৬ প্রকল্পে অনিয়মের চিত্রও কম নয়। এসব প্রকল্পে মোট ১৭শ ৫০ কোটি টাকার হিসাব পাওয়া যায়নি। সবমিলিয়ে তাকসিম খানের মেয়াদে মোট ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে অডিটে।

এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এসব অনিয়মের নথিপত্র ডেকে পাঠাবেন বলে জানান। বলেন, এসব নথিপত্র আমারা আমলে নিব। আমি অডিট বিভাগকে বলব, এটি নিয়ে কাজ করতে। যদি ওয়াসা এরকম অনিয়ম করে থাকে আর সেটা প্রমাণ হয়, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।

অবশ্য যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ সেই তাকসিম এ খান অডিট আপত্তির বিষয়টি আমলেই নিতে চায় না। উল্টো নিজের মতো করে ওয়াসার সম্পদের মূল্যায়ন করেছেন তিনি।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top