Dhaka Tuesday, May 7, 2024

২৩১ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকিতে কেএসআরএমের রেকর্ড


Published:
2021-07-18 08:21:31 BdST

Update:
2024-05-07 02:23:24 BdST

সরকারের ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (কেএসআরএম)। ভ্যাট কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত পাঁচ বছরে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানে এটিই সর্বোচ্চ রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনে মামলা হয়েছে। গুনতে হবে ফাঁকি দেওয়া রাজস্বের সুদসহ সমপরিমাণ জরিমানা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে কেএসআরএম স্টিলকে।

জানা গেছে, গত ২২ জুন সীতাকু- উপজেলার বড় কুমিরার ঘোড়ামারা এলাকায় কেএসআরএম স্টিল প্ল্যান্ট লিমিটেডে অভিযান চালায় কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের নিবারক দল। কেএসআরএম স্টিল দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ না করে ফাঁকি দেওয়ার সংবাদে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বেশ কিছু নথিপত্র ও দুটি কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করে নিয়ে আসে আভিযানিক দল। প্রায় ২৪ দিন ধরে পর্যালোচনার পর ভ্যাট ফাঁকির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। গতকাল শনিবার বিষয়টি জানাজানি হলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মহলে তোলপাড় শুরু হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৬-এর জুলাই থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ১৮ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭৬ মেট্রিক টন এমএস পণ্য বাজারে সরবরাহ করে। এর বিপরীতে ১৮৮ কোটি ৭১ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৪ টাকা সরকারি মূসক পরিশোধের কথা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে ১০৩ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ৮১৭ টাকা। এতে ৮৫ কোটি ২৯ লাখ ১৫ হাজার ৬৯৫ টাকা পাওনা থাকে সরকারের।



অন্যদিকে কাঁচামাল ক্রয়সহ সব কেনাকাটার বিপরীতে মূসক কর্তনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানেনি কেএসআরএম। ২০১৭-এর জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত ক্রয়ের বিপরীতে উৎসে মূসক কর্তনের কোনো দলিল উপস্থাপন করতে পারেনি। ৪ বছর ৫ মাসে ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৭ দশমিক ৩৩ টন কাঁচামাল ক্রয় করা হয়। এসব পণ্যের বিপরীতে উৎসে মূসক ১৪৫ কোটি ৮৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭৮৪ টাকা পরিশোধ করেনি। মূসক ও উৎসে মূসক মিলে সর্বমোট ২৩১ কোটি ১৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪৮০ টাকা ফাঁকি দেয় কেএসআরএম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেএসআরএম গ্রুপের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন হয়। আবার পণ্য রপ্তানির সুবিধা নিয়ে পণ্য রপ্তানি করেনি।

সর্বশেষ গত মাসে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে মামলা থাকা একটি জাহাজ আমদানি করে কেএসআরএমের মালিকানাধীন খাজা শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। আদালতের নির্দেশে ৮ জুলাই ইয়ার্ড থেকে নৌপুলিশ সেটি জব্দ করে। এতে মেরিটাইম বিশে^ ইমেজ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। ওই শিপ ইয়ার্ডে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় জাহাজ আমদানি স্থগিত করেছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। ইয়ার্ডে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ডের পর এবার সরকারি ভ্যাট ফাঁকির ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়ল কেএসআরএম। বিতর্ক রয়েছে সীতাকু-ে সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তা দখলের।

এদিকে এ ধরনের প্রতারণার কারণে সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মন্তব্য করে শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠিত একটি শিল্প গ্রুপের এমন কর্মকা- দুঃখজনক। তারা বলছেন, এতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, যা ব্যবসায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের উপকমিশনার আহসান উল্লাহ তরুণ আমাদের সময়কে বলেন, ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানে রাজস্ব ফাঁকি ২৩১ কোটি টাকাই সর্বোচ্চ। রাজস্ব ফাঁকি রোধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। যে কোনো সময় অভিযানে যেতে পারি।

কমিশনার মোহাম্মদ আকবর হোসেন বলেন, কেএসআরএম দীর্ঘদিন ধরে যথাযথভাবে মূসক পরিশোধ না করে নিয়মিত ফাঁকি দিয়ে আসছিল। নিবারক দলের তল্লাশি এবং তদন্তে বিশাল ফাঁকির তথ্য উঠে আসে। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিগগির কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হবে। সমপরিমাণ জরিমানা ও সুদসহ ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে কেএসআরএমকে। এ বিষয়ে কোনো ধরনের শৈথিল্য প্রদর্শন করা হবে না। তিনি বলেন, বিগত কয়েক মাসে চট্টগ্রাম ভ্যাট এ জাতীয় বেশ কিছু অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে। যারা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী মেহেরুল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না জানিয়ে ভ্যাট শাখার হাবিবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। প্রধান কার্যালয়ের পাঁচ দফা ফোন দিলেও হাবিবুর রহমানকে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর চাইলেও সরবরাহে অপারগতা জানান টেলিফোন অপারেটর।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top