Dhaka Sunday, April 28, 2024

ঢাকা ওয়াসার ‘নাটকীয়’ ইন্টারনেট বোর্ড সভা ছুটির দিনের সভায় ষষ্ঠ মেয়াদে এমডি হলেন তাকসিম

ঢাকা ওয়াসার বিতর্কিত এমডি তাকসিমেই আস্থা তাদের!


Published:
2020-09-20 13:39:21 BdST

Update:
2024-04-28 12:48:48 BdST

ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাবান মাহমুদ, মুহাম্মদ ইবরাহিম, কামরুল ইসলাম ,ডেইজি সারোয়ার,  সভাপতি আব্দুল হামিদ!

প্রধান নির্বাহীর পদে থেকে সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের পরও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে পুনরায় তিন বছরের জন্য নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তাকসিম এ খান। দীর্ঘ এগারো বছরে রাজধানীবাসীর জন্য সুপেয় পানির সেবা নিশ্চিত করতে না পারলেও ঢাকা ওয়াসার নীতিনির্ধারণী ফোরাম বোর্ড সভায় তাকে ফের তিন বছরের জন্য এমডি নিয়োগের প্রস্তাব পাস হয়েছে।

গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে অনেকটা নাটকীয়ভাবেই শেষ করা হয় এই বোর্ড সভা। আর করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে এমডি নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অনলাইন সভায়। যদিও বোর্ড সভায় মোট দশ সদস্যের মধ্যে তিনজন তাকসিমের এ নিয়োগের বিষয়ে বিধিবিধান মানার ওপর জোর দেন। কিন্তু উপস্থিত বাকি সাত সদস্য তাকে পুনরায় নিয়োগের পক্ষে মতামত দেওয়ায় তা পাস হয়ে যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে ষষ্ঠবারের মতো ওয়াসার সর্বোচ্চ নির্বাহীর চেয়ারেই থাকছেন প্রকৌশলী তাকসিম।

জানা যায়, গতকাল বিকেল ৫টায় ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের অনলাইন বোর্ড সভা আহ্বান করা হয়। সেখানে এমডি নিয়োগের জন্য ৩ বছরের সুপারিশের এজেন্ডা রাখা হয়। এ বোর্ড সভায় মোট ১০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ রশিদ সরকারের মৃত্যুতে বোর্ড চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়। তাই বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। উপস্থিত ১০ জন সদস্যের মধ্যে ৭ জন তাকসিম এ খানকে নিয়োগের পক্ষে ও ৩ জন নিয়োগের বিপক্ষে মতামত তুলে ধরেন। পক্ষে ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এর সভাপতি আব্দুল হামিদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কামরুল ইসলাম, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট-এর প্রতিনিধি মাহমুদ হোসাইন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সাবেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর ডেইজি সারোয়ার। তাকসিম এ খানের পুনঃনিয়োগের বিষয়ে বিধিমতে ব্যবস্থা নিতে অর্থাৎ তিন বছরের প্রস্তাব বোর্ডে পাস করানোর বিপক্ষে মতামত দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক, অর্থ মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব সেলিনা খাতুন ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি অলিউল্লাহ শিকদার।

সভায় কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক এমডি নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘এমডি নিয়োগের বোর্ড সভায় বর্তমান এমডি তাকসিম এ খান উপস্থিত থাকার কথা না। কিন্তু তিনি আছেন।’ এ সময় বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যান বোর্ড চেয়ারম্যান মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। একই সঙ্গে উপস্থিত আরও দুই সদস্য এ নিয়োগের ক্ষেত্রে সরাসরি সুপারিশ না করে আইনি বাধ্যবাধকতার কথা তুলে ধরেন।

সভায় উপস্থিত একজন বোর্ড সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তাকসিম এ খান ছুটির দিনে তড়িঘড়ি করে অনলাইনে সভা ডেকেছেন। সভার আগের দিন সন্ধ্যায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। যিনি গত ১১ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব নিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন, খাবার পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের নাজুক অবস্থাসহ নানা বিতর্কে জর্জরিত হয়েছেন। তাকে কেন আবার এই পদে নিয়োগ দিতে হবে। আর যদি দিতেই হয় তাহলে যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে দেওয়া হোক। কিন্তু বেশির ভাগ বোর্ড সদস্য তাকসিম এ খানের নিয়োগের পক্ষে সরাসরি সুপারিশের পক্ষে মতামত দেওয়ায় তা পাস হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পে লাগামহীন দুর্নীতি-অনিয়ম হয়েছে। যা প্রায় দেশের সব পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে। ওয়াসা গত ১১ বছরে ‘তলাবিহীন ঝুড়িতে’ পরিণত হয়েছে। তাও তিনি (তাকসিম এ খান) ওয়াসা ছাড়তে রাজি না।’ তাকসিম এ খান কেন চেয়ার ছাড়ছেন না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই বোর্ড সদস্য।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালে পাস হওয়া ‘ওয়াসা অ্যাক্ট’ অনুযায়ী। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন এমডি। ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাব বা সুপরিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার প্রধানের অনুমোদন সাপেক্ষে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়া তাকসিম এ খান পরপর পাঁচবার এ পদে নিয়োগ নিয়েছেন। প্রত্যেকবার নিয়োগের সময় নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়ে স্বপদে বহাল থাকেন বিতর্কিত এই প্রকৌশলী। এবারও ৬ষ্ঠবারের মতো নিয়োগ প্রায় চূড়ান্ত করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমদ গতকাল  বলেন, ‘ওয়াসার এমডি নিয়োগ সাধারণত বোর্ড সভার সিদ্ধান্তে হয়ে থাকে। তারা (বোর্ড) যে প্রস্তাব পাঠান তাই বাস্তবায়ন হয়।’



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top