Dhaka Sunday, May 12, 2024

বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি


Published:
2020-10-06 19:06:19 BdST

Update:
2024-05-12 13:00:59 BdST

ঢাকা: বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় সহযোগী হিসেবে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বিএসবি ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এবার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। ভ্যাট গোয়েন্দার পক্ষ থেকে তাদের ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিএসবি এডুকেশনের চেয়ারম্যান অবশ্য ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছে। তবে ভ্যাট গোয়েন্দা স্পষ্টভাবেই বলছে, তার এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৯৩ সালে গড়ে তোলা হয় বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক। দেশের বাইরে শিক্ষার্থীরে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিক দিকনির্দেশনা, পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং ছাড়াও বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন ও ভিসা প্রসেসিংসহ শিক্ষার্থীর বিদেশ গমনের প্রতিটি প্রক্রিয়াতেই তারা প্রয়োজন অনুযায়ী সহযোগিতা করে থাকে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই প্রতিষ্ঠানেরই গুলশান ২-এ অবস্থিত অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপপরিচালক তানভীর আহমেদ।

অভিযান পরিচালনার আগেই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য ভ্যাট আাইন অনুযায়ী বিএসবি গ্লোবালের মালিকের কাছে ‘ওয়ারেন্ট’ পাঠানো হয়। বিএসবি গ্লোবাল সেই ওয়ারেন্ট রিসিভও করে। তার ভিত্তিতেই ভ্যাট গোয়েন্দারা অভিযান যান প্রতিষ্ঠানটিতে।

ভ্যাট গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে দেখতে পান, বিএসবি গ্লোবাল ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করলেও গত তিন বছরে ৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সেবা বিক্রির তথ্য গোপন করেছে। অর্থাৎ এ পরিমাণ আয় প্রদর্শন করলে তাদের যে পরিমাণ ভ্যাট দেওয়ার কথা ছিল, সেটুকু ফাঁকি দিয়েছে তারা। ভ্যাট গোয়েন্দার তথ্য, এর মাধ্যমে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বিএসবি গ্লোবাল।

ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান সারাবাংলাকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে। এরপর প্রতিষ্ঠানটিতে আমাদের কর্মকর্তারা অভিযান চালান। অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পাওয়া গেছে। এখন ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

এদিকে, ভ্যাট গোয়েন্দার একটি সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠিয়েছে, বিদেশে পাঠানো শিক্ষার্থীদের টাকা কোন চ্যানেলে বিদেশে পাঠানো হয়েছে— সবকিছুই খতিয়ে দেখা হবে। এমনকি এখানে কোনোভাবে মানিলন্ডারিং হয়েছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখবে ভ্যাট গোয়েন্দা।

ভ্যাট ফাঁকির এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন বিএসবি এডুকেশন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান লায়ন এম কে বাশার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা আদৌ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছি কি না, সেটা তো তদন্ত করবে, আমাদের জানাবে বা আমরা আমাদের যুক্তি দিতে পারি। আর যুক্তি না দিতে পারলে তারা ডিমান্ড করবে। কিন্তু তারা কোনো কিছু না করেই তারা পানিশমেন্ট দিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া আমি যখন কোনো টাকা বিদেশে পাঠাই, তখন তো আমি আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠাই না। একজন শিক্ষার্থী যখন বিদেশে যাবেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থী তার ফাইল খুলে থাকেন। সেভাবে তিনি টাকা পাঠাবেন, তবে এটার জন্য সরকারকে কোনো ভ্যাট বা টাকা দিতে হয় না।

তিনি আরও বলেন, আমি যখন একজন শিক্ষার্থীকে সার্ভিস দেবো, তখন সেটার ওপর আমি ভ্যাট দেবো। এখন আমি ১০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলাম। তারা যদি সফলভাবে ভিসা পায়, তাহলে তারা আমাকে সার্ভিস চার্জ পুরোটা দেবে। কিন্তু ভিসা না পেলে কিন্তু পুরো টাকা আমাকে দেবে না। ফলে তারা কম টাকা দিলে আমরাও কম ভ্যাট দেবো। এখন আমরা যদি উপযুক্ত পরিমাণে ভ্যাট না দিই, উনারা মামলা দিতে পারেন। কিন্তু সেটা না করে তারা সরাসরি আমাদের দোষারোপ করছেন।

লায়ন এম কে বাশার আরও বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দা আমাদেরকে ৮-১০ দিন আগে চিঠি দিয়েছেন গত ৫ বছরের অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য। আমরা যথাযথভাবে সেটা পাঠিয়েছি। যাচাই-বাছাই না করে তারা সরাসরি অফিসে এলেন। তারা বললেন, গোপন তদন্তের ভিত্তিতে এসেছেন। কিন্তু এটা তো তাদের রেগুলার ডিউটি হওয়ার কথা। কারণ আমরা তো ভ্যাট-ট্যাক্স সবকিছু দিয়েই ব্যবসা করি।

লায়ন এম কে বাশারের বক্তব্য বিষয়ে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ভ্যাট গোয়েন্দা তথ্য চাওয়ার পর বিএসবি গ্লোবাল অডিট রিপোর্ট, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। সেসব নথিতে বিএসবি এডুকেশনের চেয়ারম্যানের সইও রয়েছে। অর্থাৎ তিনি জেনেবুঝেই তথ্যগুলো দিয়েছেন। সেসব তথ্যের পাশাপাশি ভ্যাট সার্কেল থেকে সংগ্রহ করা যেসব তথ্য ছিল, সবকিছু পর্যালোচনা করে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এখন তার কাছ থেকে আর কিছু জানার নেই। তাদের যা কিছু বলার, সেগুলো হলো ওই নথি যা আমাদের দিয়েছেন। এখন তাদের ভ্যাট ফাঁকির জন্য যেকোনো সময় মামলা দায়ের হবে। তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে আদালতে উপস্থাপন করবেন।

বিএসবি গ্লোবালের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করা হবে বলেও জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাট গোয়েন্দার এক কর্মকর্তা বলেন, উনারা সেবা দিয়ে থাকেন। সেবা খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি ঠিকভাবে দিতে হবে না। সেটি দিতে হবে না ভেবে নিলে তা ভুল ভাবনা হবে। আর আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করব। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি— যে কারও অ্যাকাউন্টই হতে পারে সেটা। এসব অ্যাকাউন্টে অপ্রদর্শিত কোনো লেনদেন থাকলে কিংবা ভ্যাট বা ইনকাম ট্যাক্সে কোনো অসঙ্গতি থাকলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top