Dhaka Saturday, May 11, 2024

দুদকের ফাঁদে শত কোটিপতি ‘দিনমজুর’ সেলিম !


Published:
2020-10-10 19:18:43 BdST

Update:
2024-05-11 16:40:56 BdST

অভাবের সংসারে তিন বেলা খেতেই একসময় হিমশিম খেতে হতো। দিনমজুরি করে কায়ক্লেশে জীবন চলত। সেই সেলিম খান রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আঙুল ফুলে এখন কলাগাছ হয়েছেন। ১০ তলা বাড়ি, কোটি টাকার ফ্ল্যাটসহ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করেছেন কোটি কোটি টাকা। তিনি এই ভাগ্যবদলের হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বর্তমানে বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে। সম্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসা এবং চাঁদাবাজির সহযোগী হিসেবে এক যুগের ব্যবধানে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন সেলিম। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও হয়েছেন।

সেলিম খানের অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে অর্জিত কোটি কোটি টাকা বৈধ করতে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় নামেন সেলিম খান। শাপলা মিডিয়া নামে তাঁর প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানে চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করা এসব অর্থের বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি।

এর বাইরেও দুদকের অনুসন্ধানে সেলিম খানের প্রায় ২১ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে আছে রাজধানীর কাকরাইলে চারতলা বাড়ি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০ তলা বাড়ি, কাকরাইলে ফ্ল্যাট, দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি এবং রাজধানী ঢাকা ও চাঁদপুরে সাড়ে চার একর জমি। এসব সম্পদ নিজের নামে এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তাঁর স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা আতাউর রহমান সরকার।

দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তাঁর পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তাঁর মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। দুদকের পাওয়া হিসাব থেকে এই অর্থ বাদ দেওয়া হলেও সেলিম খানের ২০ কোটি ৬৯ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ টাকার সম্পদ থেকে যায়, যার বৈধ উৎস ও রেকর্ডপত্র নেই।’

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, সেলিম খানের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৪.২১ একর কৃষি ও অকৃষি জমি, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ১০ তলা বাড়ি, ঢাকার কাকরাইলে চারতলা বাড়ি ও একটি ফ্ল্যাট। এসব সম্পদের আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ১৪০ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে দুটি জিপগাড়ি, চারটি ড্রেজার, একটি শটগান, স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্র বাবদ তিন কোটি তিন লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ টাকা। এ ছাড়া ব্যাবসায়িক মূলধন হিসাবে দুই কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ২৪৫ টাকাসহ তাঁর অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ধরা হয়েছে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার ৮৪৫ টাকা।

সেলিম খান ‘শাহেনশাহ’ চলচ্চিত্র নির্মাণে এক কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ‘প্রেম চোর’ চলচ্চিত্র নির্মাণে দুই কোটি সাত লাখ টাকাসহ ছয়-সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রায় ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে বিভিন্ন নথিপত্রে উঠে এসেছে। এসব অর্থের কোনো বৈধ উৎস এখনো পাওয়া যায়নি বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

তাঁর বিরুদ্ধে গুচ্ছগ্রামে দরিদ্রদের ঘর নির্মাণেও জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। চাঁদপুর সদরের লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিরা বাজার এলাকার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে একতলাবিশিষ্ট ১০০টি ভবন নির্মাণে অনিয়ম এবং বরাদ্দকালে প্রতিটি ঘর বাবদ ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগের বিষয়ে গত বছরের ৩১ অক্টোবর অভিযান চালায় দুদকের কুমিল্লা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাফি মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বাধীন একটি দল। অভিযানকালে দুদকের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম হয়েছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে চেয়ারম্যান সেলিম খান নিজেই বেআইনিভাবে প্রকল্প এলাকার নিকটবর্তী নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ টন বালু উত্তোলন করেছেন।

এতে প্রকল্প এলাকায় নদীভাঙনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওই সময়ে প্রকল্পের ১৫টি ঘর নদীতে বিলীন হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। গুচ্ছগ্রামের ঘর বরাদ্দে ঘুষ লেনদেনের সত্যতাও পাওয়া যায়। ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে সম্রাট, জি কে শামীম, ল্যাংড়া খালেদসহ ২০০ জনের যে তালিকা নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে, সেখানেও সেলিম খানের নাম আছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম খান  বলেন, ‘ভাই, দুদকের অভিযোগ নিয়ে এই মুহূর্তে আমি কথা বলতে পারব না। আগামীকাল আমার নির্বাচন (আজ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী), সেটা নিয়ে ব্যস্ত। আমি কোনো দুর্নীতি করলে দুদক বিষয়টা দেখবে। এর বেশি আমি কোনো কথা বলতে চাই না।’



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top