Dhaka Saturday, May 11, 2024

কিট এলেই অ্যান্টিজেন টেস্ট


Published:
2020-10-15 17:26:58 BdST

Update:
2024-05-11 14:13:54 BdST

দেশে অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখন অপেক্ষা শুধু বিদেশ থেকে পরীক্ষার কিট এসে পৌঁছানোর। এজন্য প্রাথমিকভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত দুই কোম্পানির প্রায় দুই লাখ কিট দুয়েক দিনের মধ্যেই হাতে পাওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে কিট এসে পৌঁছানোর পরই বলা যাবে ঠিক কবে নাগাদ অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হবে দেশে। সে হিসাবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু করা যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, কিট ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা কিট হাতে পেলেই পরীক্ষা শুরু করে দেব। তবে নাগাদ কিট দেশে এসে পৌঁছতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বলা যায় না। তবে শিগগির চলে আসবে।

একইভাবে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর  বলেন, শিগগির শুরু হবে। সঠিক দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না। কারণ কিট কবে এসে পৌঁছবে, সেটার ওপর নির্ভর করবে। এখনো কিট এসে পৌঁছায়নি। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্ট দুয়েক দিনের মধ্যেই শুরু করা সম্ভব নয়। শুরু হতে সপ্তাহখানেক লেগে যাবে।

অবশ্য অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআরের কর্মকর্তারা। তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, যেসব জেলায় আরটিপিসিআর মেশিন নেই এবং সংক্রমণ হার সবচেয়ে বেশি, সেসব জায়গায় কিট আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে শুরু হবে। পরে ধারাবাহিকভাবে অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে শুরু করা হবে।

প্রাথমিকভাবে সরকার দুই কোম্পানির কিট অনুমোদন দিয়েছে। একটি জার্মানির অ্যাবট কোম্পানি ও আরেকটি দক্ষিণ কোরিয়ার এসবি বায়োসেন্সর কোম্পানির। সরকারিভাবে এ দুই কোম্পানির দুই লাখ কিট কেনা হচ্ছে। কিট দুটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক ও ইউনিসেফ দিয়েও কিট কেনাবে সরকার।

রাজধানীর যেসব সরকারি কভিড হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে আরটিপিসিআর মেশিন নেই, সেসব হাসপাতালের মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও ক্যানসার হাসপাতালে আগে শুরু করা হবে। পাশাপাশি বারডেম ও হার্ট ফাউন্ডেশনসহ যেসব বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালে আরটিপিসিআর মেশিন নেই, সেখানেও দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে ফি কত হবে, সেটা নির্ভর করবে কিট কিনতে কত টাকা ব্যয় হয়, তার ওপর। এসব হাসপাতালকে নিজ অর্থে সরকার অনুমোদিত কিট কিনতে হবে।

এসব কর্মকর্তা আরও জানান, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য সরকার ফি নির্ধারণের চিন্তা করছে। সে ক্ষেত্রে এখনকার মতো জনপ্রতি ১০০ টাকা ফি ধার্যের প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত দুই কোম্পানির কিট কিনছি। প্রাথমিকভাবে দুই লাখ কিট কেনা হচ্ছে। এটা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (সিএমএসডি) কিনছে। এ দুই কোম্পানির বাইরে আরও কিছু কোম্পানির অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করছি। কারণ শুধু এ দুই কোম্পানির কিটের ওপর নির্ভর করলে হবে না। এছাড়া আরও কিছু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাও আমাদের কিট কিনে দিচ্ছে। সেগুলোও পাইপলাইনে আছে। তবে অ্যান্টিজেন টেস্টের ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণ বা উপসর্গ থাকতে হবে। এমনকি উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ-সাত দিনের মধ্যেই পরীক্ষা করতে হবে। দেরি হয়ে গেলে অ্যান্টিজেন পাওয়া যাবে না বলে জানান এ বিশেষজ্ঞ।

অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হলে করোনা শনাক্তের পথ আরও সহজ হবে এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বাড়বে বলে মনে করেনে বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ  বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে টেস্টের ফলাফল পাওয়া সম্ভব। এছাড়া এ টেস্টে তেমন কোনো ধরনের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি দরকার হয় না বলে ফিল্ডে বা মাঠপর্যায়েই এ পরীক্ষা চালানো সম্ভব। বিশেষ করে যেকোনো কারণে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে যদি রোগী আসে, সে সময় যদি আমরা অ্যান্টিজেন টেস্ট করে ফেলতে পারি, তিনি যদি করোনামুক্ত হন তাহলে আমরা তার স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব। কিন্তু যদি করোনা পজিটিভ হন, তাহলে তাকে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা করতে পারি। এছাড়া আমাদের ট্রেসিং টেস্টিংয়ের জন্য অ্যান্টিজেন পরীক্ষা অবশ্যই প্রয়োজন।

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমরা যখন কোনো এলাকায় অনুসন্ধান করব, তখন যদি কাউকে সন্দেহ হয়, আমরা তাকে টেস্ট করে যদি পজিটিভ পাই, তাহলে কিন্তু তাকে দ্রুত আইসোলেট করে ফেলা যাবে। তার থেকে রোগ আর অন্যদের ছড়াবে না। সুতরাং আমাদের অ্যান্টিজেন টেস্ট এখন খুব জরুরি। একজন রোগীর বাড়িতে বসেই ১৫ মিনিটের মধ্যে বলে দেওয়া যাবে তিনি করোনা আক্রান্ত কি না।

অ্যান্টিজেন কিট কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা  বলেন, সিএমএসডির বাইরে ইউনিসেফকে দিয়েও কেনানো হচ্ছে। সরকারের এডিবির প্রজেক্ট থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও কিনবে। এর জন্য তারা বাজেট দেবে। এগুলোর কোনোটা ঋণ, কোনোটা অনুদান। এডিবির লোনের প্রজেক্ট। সেখান থেকে কেনা হচ্ছে। তবে বিশ্বব্যাংক কিট কেনার জন্য আলাদা অর্থ দেবে এবং কত দ্রুত কেনা যায়, সে ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।

কিটের ভ্যালিডেশন (ডেটার মান) পরীক্ষা প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, যে দুটি কিট প্রাথমিকভাবে কেনা হচ্ছে, সে দুটোর ভ্যালিডেশন টেস্ট শেষ। এ দুটোর বাইরে আরও কিছু কিটের পরীক্ষা চলছে ও কিছু কিটের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। অনেক রকমের কিট রয়েছে। সব পরীক্ষা করছি। এক বা দুই কিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চ্যালেঞ্জিং হবে। কারণ পরীক্ষা শুরুর পর যদি এ দুই কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বা সংকট দেখা দেয়, তখন পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য যে কিটের খোঁজ পাচ্ছি, সেটারই ভ্যালিডেশন করছি। এটা নিয়মিতভাবে চলবে।

বেসরকারি হাসপাতালে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরুর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে চালুর ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে কিট ও পরীক্ষার মান ঠিক রাখার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু নিয়মনীতির চিন্তাভাবনা করছে। পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেটা ঠিক কী পরিমাণ হবে, সেটা নির্ভর করবে কত টাকায় কিট কেনা হয়, সেটার ওপর। কিট আনার পর বোঝা যাবে ফি কত হবে। সরকারি ফি নির্ধারণও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু অ্যান্টিজেনের ফলস নেগেটিভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যারা নেগেটিভ হবে, তাদের আবার পিসিআর টেস্ট করা হবে। ফলে পিসিআরে করতে এখন যে খরচ, সেটা অ্যান্টিজেনের ক্ষেত্রেও হওয়া উচিত। আমরা যে ১০০ টাকা নিই, সেটা সরকারের সাশ্রয়ের জন্য করা হয়নি। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা কমানোর জন্য করা হয়েছে। কারণ প্রচুর অপচয় হয়েছে। এমনও হয়েছে একজন ৬০ বারও পরীক্ষা করেছে। একটা কিট পাওয়া খুব কঠিন। ফলে যে ১০০ টাকা নেওয়া হয়, সেটা নমুনা সংগ্রহের জন্যই নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অ্যান্টিজেনের ব্যাপারে বর্তমান পিসিআর টেস্টের ফির বাইরে অতিরিক্ত ফি নাও ধরা হতে পারে। অবশ্য এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

অ্যান্টিজেন টেস্টের সুবিধার ব্যাপারে ডা. এএসএম আলমগীর বলেন, এ পরীক্ষার বড় সুবিধা হলো ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই রেজাল্ট পাওয়া যাবে। যদি করোনা পজিটিভ হয়, তাহলে পজিটিভ নিশ্চিত। কিন্তু লক্ষণ ছাড়া পরীক্ষা করা যাবে না এবং উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাত দিনের মধ্যেই পরীক্ষা করতে হবে। শরীরে ভাইরাস না থাকলে অ্যান্টিজেন ধরতে পারবে না। আবার লক্ষণ যদি থাকে কিন্তু নেগেটিভ আসে, তাহলে আরটিপিসিআর মেশিনে (এখন যে পরীক্ষা চলছে) করতে হবে। করোনা রোগীর জরুরি চিকিৎসায় কাজে লাগবে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দেয় সরকার। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিঠিতে বলা হয়, অতি স্বল্প সময়ে কভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য সারা দেশে অ্যান্টিজেন টেস্টের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রস্তাব এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১১ সেপ্টেম্বরের ‘ইনটেরিম গাইডেন্স’ অনুসরণ করে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পিসিআর ল্যাব এবং সব স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে অ্যান্টিজেনভিত্তিক টেস্ট চালুর অনুমতি দেওয়া হলো। এর আগে গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন নীতিমালার খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর ২৪ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top