Dhaka Sunday, May 12, 2024

স্বাস্থ্য প্রশাসনে কর্তৃত্ব চান চিকিৎসকরা


Published:
2020-10-21 17:18:55 BdST

Update:
2024-05-12 21:33:33 BdST

দেশের স্বাস্থ্য খাতে প্রশাসনের কর্তৃত্ব মেনে নিতে চাইছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান ও সাবেক চিকিৎসক কর্মকর্তাসহ চিকিৎসকরা। সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে দেখতে চান না তারা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের অধীন প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে সব পদে চিকিৎসকদের নিয়োগের পক্ষে তারা। এমনকি স্বাস্থ্য খাতের যেকোনো প্রকল্প ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এবং স্বাস্থ্যগত দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও মত তাদের।

করোনা শুরুর পর মে-জুন থেকে এতদিন এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নানা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন চিকিৎসক নেতারা। এ জন্য দফায় দফায় বৈঠক ও আল্টিমেটামও দিয়েছেন তারা। কিন্তু এসব পরামর্শ ও প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত আট মাসেরও বেশি সময় নিজেদের মতো করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এখন চিকিৎসকরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সচিব (স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ), কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালকসহ তিন কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরসহ আরও কিছু অধিদপ্তরে কর্মকর্তা পদে প্রশাসন ক্যাডারের লোকজনদের নিয়োগ দেওয়ায় বেশি ক্ষেপেছেন চিকিৎসকরা। গত কয়েক মাসে স্বাস্থ্য খাতে বেশকিছু নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো পরামর্শই করেননি বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। এমনকি বিভিন্ন জেলায় স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরিবর্তে ডিসিদের নিয়ে সভা করার অভিযোগও উঠেছে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রশাসনের বিরোধ এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এতদিন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ও সরকার সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) নেতারা সভা-সেমিনার ও বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানালেও এখন তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করছেন।তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমান চিকিৎসক নেতা এবং জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরাও।

গত তিন দিন ধরে চিকিৎসকরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। গত রবিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তারা প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। সেদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিএমএ ও স্বাচিপের বর্তমান শীর্ষ নেতা এবং বিভিন্ন সময় চিকিৎসকদের পেশাজীবী রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক নেতা ও জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নালিশ করেছেন। পরদিন সোমবার সর্বস্তরের চিকিৎসকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছে বিএমএ ও স্বাচিপ। সেখানেও স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও বিষোদগার করা হয়। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবারও এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিএমএ ও স্বাচিপ। সেখানেও এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।

বিএমএ ও স্বাচিপ নেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরবেন। ইতিমধ্যেই তারা বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন এবং তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে জানানোর আহ্বান করেছেন। এ ছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে দেশব্যাপী বিএমএ ও স্বাচিপ নেতাকর্মী, অন্যান্য পেশার ক্যাডার কর্মকর্তা, রাজনীতিক ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন তারা। জনমত গঠনের পর চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য খাত পুনর্গঠনে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দেবেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

স্বাস্থ্য খাতের চিকিৎসক কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন দ্বন্দ্বের পেছনে দুই পক্ষ দুই ধরনের মত দিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি কমাতে ও শৃঙ্খলা আনতে স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। এসব সিদ্ধান্ত স্বার্থান্বেষী চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তারা ক্ষেপেছেন। এমনকি এসব চিকিৎসক বাড়াবাড়ি করছেন বলেও জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে চিকিৎসদের দাবি, প্রশাসন স্বাস্থ্য খাত দখল করতে চায়। তাদের কর্র্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এর পেছনে সরকারকে বিব্রত অবস্থায় ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও করেছেন তারা। চিকিৎসকদের মতে, তারা বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে সরকারকে বিপদে ফেলতে চায়। তাই শুধু পেশাজীবী না, রাজনৈতিক নেতাদেরও এসবের প্রতিবাদ জানানো উচিত বলে মনে করেন তারা।

এসবের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ যে স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে, কথা বলার জন্য তাকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে গত দু’তিন দিন তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, চিকিৎসকরা বাড়াবাড়ি করছেন। এমনকি স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে চাইছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পরে গতকাল মঙ্গলবার সচিবের বিভিন্ন সময় মন্তব্য ও বক্তব্যের প্রতিবাদে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে বিএমএ ও স্বাচিপ। সেখানে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্তাব্যক্তির অযাচিত বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, যখনই দেশের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলা হয়, যখনই স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ অন্য ক্যাডারে প্রশাসন ক্যাডারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্শ্ব অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলা হয়, যখনই চিকিৎসকদের পদমর্যাদা, চাকরিবিধি অনুযায়ী পদোন্নতির কথা বলা হয়, যখনই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির বিষয়টি সবার দৃষ্টিগোচরে আসে, যখনই পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা, দক্ষতার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের আনুগত্যের কথা বলা হয় তখনই ঢালাওভাবে চিকিৎসক নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মূল বিষয়গুলো আড়াল করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত হন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয়ের কেউ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে তার কর্মে ভিন্ন অবস্থান পরিলক্ষিত হলে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান সবসময় দৃঢ় থাকবে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার এটি একটি কৌশল মাত্র। চিকিৎসকদের মানমর্যাদা ও অধিকার ক্ষুণ্য হয় এমন কোনো কাজ কিংবা সরকারের পদায়ন নীতিমালা কিংবা ক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টিকারী যেকোনো কর্মকান্ডের অথবা স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন কল্পে যেকোনো আদেশ নির্দেশের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অতীতেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’

এমন পরিস্থিতির সমাধান কী জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমি ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের আশ্বস্ত করে বলেছি, তাদের স্বার্থহানি হয়, এমন কিছু আমরা করব না। পদ-পদবি নিয়ে যে আশঙ্কা করেছেন, তা ভেবে দেখা হবে। তাদের আরও বলেছি, আমার হাত দিয়ে এমন কোনো কাজ হবে না, যেটা স্বাস্থ্যসেবার বা ডাক্তারদের স্বার্থহানি হবে। আপনারা আমার পূর্ণ সহযোগিতা পাবেন।

এ ব্যাপারে বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী  বলেন, আমাদের উদ্বেগটা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রশাসনের লোকজনের নিয়োগ নিয়ে। আমরা এসবের তীব্র প্রতিবাদ করছি। এগুলো একটি স্বার্থান্বেষী মহলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। এই মহল সরকারকে একটা বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলতে চায়। এসব তাদের আগ্রাসী মনোভাব। তারা প্রত্যেকটা জায়গায় দখলদার ও খবরদারি করতে চায়। ইদানীং তারা রাজনীতিতেও খবরদারি করার চেষ্টা করছে। করোনার কারণে তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সামনাসামনি হতে পেরেছে। সেই সুযোগটা তারা কাজে লাগাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ও প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দোহাই দিয়ে তারা এসব কাজ করছে।

এই চিকিৎসক নেতা বলেন, আমাদের উদ্বেগটা হলো তারা ক্যাডার কম্পোজিশন লঙ্ঘন করছেন। আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ আছে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে আন্তঃক্যাডার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। বরং ক্যাডার বৈষম্য কমানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর এক বছর আগের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ২৬ ক্যাডারের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে কোথায় কোথায় বৈষম্য আছে সেগুলো তুলে ধরে বৈষম্য নিরসনের সুপারিশ করা হয়েছিল। এরপর এলো করোনা। পরে সেগুলো তো ধামাচাপা পড়লোই, উল্টো তারা আরো আগ্রাসী হয়ে উঠল।

প্রশাসনের পক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকা- তুলে ধরে এই বিএমএ নেতা বলেন, প্রথমেই তারা কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে পরিচালক নিয়োগ দিলো একজন আমলাকে। সেখানকার পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পদ। ক্যাডার কম্পোজিশনে কে কোথায় নিয়োগ পাবে সেটা স্পষ্ট লেখা আছে। কেউ চাইলেও অন্য কোনো ক্যাডারে আসতে পারবেন না। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি পদে ঔষধাগারে তারা একজন অতিরিক্ত সচিবকে বসাল। কারণ হিসেবে বলল, আগের পরিচালক ভালো কাজ করেননি। অথচ নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হলো। এমনকি এই পরিচালক প্রতিষ্ঠানের নাম পর্যন্ত বদলে ফেলেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অধীনে কোনো সভায় যোগদান করেন না। অথচ তিনি একজন পরিচালকের পদে যোগ দিয়েছেন। তার ওখানে অন্যান্য পরিচালকদের যেতে হলে তার অনুমতি লাগে। এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সেখানে আরও একজন উপসচিব ও আরেকজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিবকেও ওখানে পদায়ন করেছে। অথচ ওখানে উপপরিচালক ও পরিচালক পদে থাকবেন চিকিৎসক। এটা যেন মগের মুল্লুক।

এই বিএমএ নেতা আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে কিছু পরিকল্পনা প্রকল্প আছে। স্বাস্থ্যের ৮০ শতাংশ কাজ হয় এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অধীনে। গত ২২ সেপ্টেম্বর এসব প্রকল্পের প্রকল্প ম্যানেজার ও পরিচালকদের মধ্যে ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজারের দুটি পদে একজন ডেপুটি সেক্রেটারি ও একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিকে পদায়ন করে। অর্থাৎ তারা পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দখলে নিতে চায়।

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কর্মকান্ড তুলে ধরে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, গত চার-পাঁচ দিন আগে দিনাজপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের একটি অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব যাবেন। তিনি ওখানে একটি সভা ডেকেছেন। সেখানে সভাপতিত্ব করবেন ডিসি। আমাদের প্রশ্ন সেখানে, ডিসি কেন? সেখানে কলেজ অধ্যক্ষ ও সুপারিনটেন্ডেন্ট আছেন। তারা সভাপতিত্ব করবেন। আমাদের প্রতিবাদের মুখে পরে ওই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে।

এমনকি মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্প পরিচালক পদেও প্রশাসনের লোকজন বসানো হচ্ছে বলে জানান এই বিএমএ মহাসচিব। তিনি বলেন, গত ৫০ বছর ধরে স্বাস্থ্যের প্রকল্প পরিচালক পদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নিয়োগ পাচ্ছেন। সেখানে মন্ত্রণালয়ের লোক দেবে। অর্থাৎ তারা বেপরোয়া হয়ে গেছে।

বিশেষ করে এই সচিব (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মো. আবদুল মান্নান) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসার পর থেকে চিকিৎসকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মানহানিকর কথা বলা এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনে আগ্রাসনমূলক মনোভাবের কারণে প্রশাসনের লোকজনদের স্বাস্থ্য খাতে বসানোর পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএমএ মহাসচিব। তিনি বলেন, উনি এসেই প্রথমে বললেন, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে দুটির বেশি টেস্ট লিখতে পারবেন না। তিনি বলার এটা কে? চিকিৎসকরা কী চিকিৎসা দেবেন সেটা তারা বুঝবেন। ওনারা বাড়তে বাড়তে এই পর্যায়ে চলে যাচ্ছেন।

এই বিএমএ নেতা বলেন, প্রশাসনের এসব আমরা আর সহ্য করব না। আমরা সারা বাংলাদেশে চিকিৎসক সমাজ এসব নিয়ে প্রতিবাদ করছি। এসব বন্ধ করতে যেকোনো কিছু করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। আমরা আমাদের ক্যাডারের আত্মসম্মান বিসর্জন করে, ক্যাডার কম্পোজিশন লঙ্ঘন করে, নিয়োগ বিধিমালা নিয়ম না মেনে, এসব করার মানে হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্য। এটা অপরাধ। অসৎ উদ্দেশ্যে তারা এসব করছে। আমরা দফায় দফায় মতবিনিময় করব। কৃষিবিদ ও প্রকৌশলীরাও বলছে, তাদের পদ দখল করে নিচ্ছে। তাদেরসহ সব পেশাজীবীর সঙ্গে বিএমএ কথা বলব। আমরা দুটি বিষয়ের সঙ্গেও কথা বলব।

‘আমরা দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এক. প্রশাসনের লোক নিয়োগ বন্ধ করা ও যাদের নিয়োগ দিয়েছে তাদের প্রত্যাহার করা। দুই. স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কীভাবে পুনর্গঠন করা যায়, সে ব্যাপারে একটা খসড়া প্রস্তুত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করব।’ জানান মহাসচিব।

স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের লোকাজনদের স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পদে বসিয়ে দিচ্ছে, সেখানেই আমাদের উদ্বেগ। কভিড নিয়ন্ত্রণের সময় তাদের উচিত ছিল জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের কথা শোনা। সেটা শোনেনি। পরামর্শক কমিটি পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলোও শোনেনি। আমাদের মূল ক্ষোভের জায়গা হচ্ছে, তারা স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন পদে প্রশাসনের লোকজন, প্রশাসকদের পদায়ন করছে। সেটাই মূল উদ্বেগ। একজনও বসানো যাবে না। আমরা একজনও দেখতে চাই না। এটা সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন এমন করছে জানতে চাইলে এই চিকিৎসক নেতা বলেন, তারা স্বাস্থ্য খাত দখল করতে চায়। কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখন আমরা পর্যায়ক্রমে আন্দোলন আরও বেগবান করব। দেশজুড়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলব। এখন আমরা অন্য পেশাজীবীদের সঙ্গে বসব। সারা দেশের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলব। কারণ প্রশাসন তাদের ওপরও খবরদারি করছে। সংসদ সদস্যদের সাইডলাইনে রেখে তাদের কার্যক্রম চালায় যাচ্ছে। এই জনসম্পৃক্ততাহীন ব্যবস্থা কাম্য নয়। কোনোভাবেই এসব রাষ্ট্রের মঙ্গল বয়ে আনে না। সরকারকে তারা চতুরতার সঙ্গে বিরাজনীতিকরণ করার চেষ্টা করছে। এগুলো আমাদের দেখার বিষয় আছে। শুধু পেশাজীবী না, রাজনৈতিক নেতাদেরও এসবের প্রতিবাদ জানানো উচিত।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top