Dhaka Monday, May 13, 2024

মুখ থুবড়ে বাটা, নিম্নমানের জুতা উচ্চ দামে বিক্রি, লোকসান ১২২ কোটি!


Published:
2020-10-24 21:34:29 BdST

Update:
2024-05-13 14:31:18 BdST

নিম্মমানের পণ্য সরবাহ,গ্রাহকদের বিশ্বাস ধরে রাখতে না পারা লকডাউনসহ বিভিন্ন কারণে ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ বাজারে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল ফিতরে পণ্য বিক্রিতে বড় ধাক্কা খেয়েছে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড।

তবে পরে দেশে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হলেও পরবর্তী মৌসুমেও কাঙ্খিত পণ্য বিক্রি হয়নি। ফলে বাটা সু বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় লোকসানে পড়েছে।
করোনার দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণের কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষের আর্থিক সক্ষমতা কমে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে জুতা বিক্রিতেও। চলতি দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পণ্য বিক্রি ৮৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় ব্যাপক লোকসানে পড়ে দেশে এক সময়ের শীর্ষ জুতা উৎপাদনকারী বাটা সু কোম্পানি। পরবর্তীতে জীবনযাত্রায় স্বাভাবিকতা ফিরে এলেও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সতর্কতা অবলম্বন করায় তৃতীয় প্রান্তিকেও (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানির বিক্রি কমেছে ১৮ শতাংশ। এর ফলে চলতি বছরের ৯ মাস শেষে বাটা সুর নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছর কোম্পানিটির নিট মুনাফা ছিল ৩২ কোটি টাকা।

চলতি বছরের বড় লোকসানের কারণ হিসেবে কোম্পানিটি করোনা পরিস্থিতিকেই দায়ী করেছে। যদিও তৃতীয় প্রান্তিকে বাটা সুর উৎপাদন, প্রশাসনিক ও বিক্রি ব্যয় বৃদ্ধিও লোকসানের অন্যতম কারণ। ২০১৯ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় ছিল মোট বিক্রির ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। সেখানে চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে উৎপাদন ব্যয় মোট বিক্রির ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।

বাটা সুর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটি পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা কম। আগের বছরের তুলনায় উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে বাটা সুর মোট আয় নেমে আসে ২৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৩ দশমিক ৬ শতাংশ কম। বিক্রি কমলেও এ সময় কোম্পানির প্রশাসনিক, বিক্রি ও বিপণন ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

বিভিন্ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাটা সু বড় অঙ্কের পরিচালন লোকসানে পড়ে। চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা ছিল। কর পরিশোধের পর চলতি তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়ায় ৫১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নিট মুনাফা ছিল। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও নিট লোকসান ছিল ৭৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। অবশ্য প্রথম প্রান্তিকে বাটা সুর ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়।

এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে দেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় জুতার বাজার হারাচ্ছে বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড। এখন মহামারী করোনার কারণে প্রতিযোগিতায় আরও পিছিয়ে পড়ছে এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে জুতা বিক্রির সবচেয়ে বড় মৌসুম ঈদুল ফিতরে ব্যবসা করতে না পারায় বাটা সু তাদের উৎপাদন চার মাস বন্ধ রাখে। বড় অঙ্কের লোকসানের পাশাপাশি কোম্পানিটির তারল্য পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে।

বাটা সু সূত্র জানায়, দুই ঈদ কোম্পানির পণ্য বিক্রির মৌসুম। এ সময় পণ্য বিক্রি করে কোম্পানি মুনাফায় থাকে। আর বছরের অন্য সময়ে পণ্য বিক্রির আয় দিয়ে ব্রেক ইভেনে থাকে। কিন্তু এবার মহামারীর কারণে রোজার ঈদে ব্যবসা হয়নি। আবার কোরবানির ঈদের সময় জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও সাধারণ মানুষের আর্থিক সংকটের কারণে বিক্রি কম হয়েছে। অথচ ওই দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা হয়েছিল। বড় মৌসুমে পণ্য বিক্রি করতে না পারায় ব্যাপক লোকসানে পড়েছে বাটা। কর্মকর্তারা জানান, ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।

চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) বাটা সুর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সময় কোম্পানির পণ্য বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ৩৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫ শতাংশ কম। এ সময়ে মোট মুনাফা হয় ৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কম। প্রশাসনিক, বিক্রি ও বিতরণ খরচের পর চলতি বছরের ৯ মাসে পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ১০৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ৬১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা ছিল। সুদ বাবদ ব্যয় ও কর পরিশোধের পর চলতি বছরের ৯ মাসে বাটা সুর নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা নিট মুনাফায় ছিল।

বাংলাদেশে কোম্পানিটি প্রায় ৫৭ বছর ধরে ব্যবসা করছে। শুরু থেকেই স্থানীয় বাজারে আধিপত্য বজায় রাখে কোম্পানিটি। তবে গত কয়েক বছরে এ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। বাটা সুকে হটিয়ে স্থানীয় বাজারের শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড। গত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ বাজার ধরতে ওরিয়ন, প্রাণ-আরএফএল, ইউএস-বাংলা ও রানারের মতো করপোরেট প্রতিষ্ঠান জুতার ব্যবসায় নেমেছে। এ ছাড়া লেদারেক্স, জিলস ও বে সুজের মতো কিছু কোম্পানিও দেশের বিভিন্ন স্থানে নিজস্ব শোরুম দিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। এর বাইরে সস্তা চীনা পণ্যেরও বিশাল বাজার রয়েছে। এসব কারণে বাজার হারিয়ে বাটা সু নেমে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। ২০১৮ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরেও কোম্পানির নিট মুনাফা কমে সাড়ে ১১ শতাংশ। আর ২০১৯ সালে নিট মুনাফা ৫০ শতাংশ কমে যায়।

এদিকে, গ্রাহকদের অভিযোগ ভিন্ন, করোনা নয়, নিন্ম মানের পণ্য তৈরিই লোকসানের প্রধান কারন।
এসম্পর্ক গ্রাহকদের মতামত তুলে ধরা হলো,মোঃ লুৎফর রহমান নামের বাটার এক নিয়মিত গ্রাহক লিখেন,
করোনা নয় ননিন্ম মানের সু তৈরিই লোকসানেই মূল কারন।

একেএম রফিকুল ইসলাম নামে অন্য একজন বলেন, বাটা এখন আর সেই বাটা নাই,
তারা এখন খুবই নিম্নমানের প্রোডাক্ট তৈরী করে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার প্রোডাক্টগুলোর মান খুবই বাজে।

জয় দা নামে একজন নামে লিখেন,
করোনা নয়।বেশী দামে বাজে ডিজাইন এর জুতা বেচলে কাস্টমার নিবে কখনো।কম দামে অনেক সুন্দর সুন্দর ডিজাইন এর জুতা পাওয়া যায় বাজারে।একটা বাটা জুতা চয়েস করলে দাম চা চায় তা দিয়ে ২/৩ টা লোকাল জুতা কেনা যায়।একটা নস্ট হলে আর একটা কেনা যাবে।বয়স্ক মানুষের জন্য যে জুতা গুলো পাওয়া যায় ওটা আগে ছিলো ৩০০/৪০০,এখন করা হয়েছে ৬০০/৭০০..কি মনে হয় এক বালের জুতা এত টাকা দিয়ে আগেকার লোকে কেনবে।বয়স্ক মানুষগুলো ছিলো বাটার জেনুইন কাস্টমার, এ আর কি।
এজন্য বাটা মার খেয়ে গেছে।



Topic:


Leave your comment here:


Most Popular News
Top